
দুর্ভাগ্য কি জিনিস তা এই মানুষগুলোর মৃত্যুর কারণ জানলে বুঝতে পারবেন!
জন্মেছেন যেহেতু মরতে আপনাকে হবেই। সবাই একই পথের পথিক। কিন্তু সব মৃত্যুর পেছনে কোন না কোন কারণ থাকে, তাই না? রোগ, বার্ধ্যক্য কিংবা দূর্ঘটনা এসবেই মানুষ মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু যদি আপনি চিনি খেয়ে মরে যান কিংবা দুই হাত উঁচু স্থান থেকে পড়ে মরে যান? সেক্ষেত্রে আসলে কোন যুক্তি কাজ করে না। এমন ই খুব অদ্ভুত ও অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আমরা সাজিয়েছি আজকের আয়োজন।
১০.ইঁদুর ও একটি অপমৃত্যু
Internet
১৮৭৫ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার আমলে ইংল্যান্ডে একটা খুব অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। একটা কারখানায় যথারীতি সকলে কাজ করছিল। হঠাৎ একজন তরুণী যে তখন তাঁর টেবিলে কাজ করছিলেন চিৎকার করেন। দ্রুত এক সাহসী যুবক তাঁর টেবিলের সামনে দৌড়ে উপস্থিত হলেন। তখন তিনি দেখতে পেলেন একটা ছিঁচকে ইঁদুর ঐ নারী কর্মীর টেবিলের চারপাশে ঘোরাঘোরি করছিল।
একটা কথা বলে রাখছি সেটা হল- সে সময় কারখানাগুলো এখনকার মতো অতটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিল না। যার কারণে প্রচুর পোকামাকড় ও ইঁদুরের আস্তানা ছিল সব কারখানাগুলোতেই। যাইহোক সেই সাহসী লোকটি ইঁদুরটি খপ করে ধরে ফেললেন কিন্তু ঠুস করে ইঁদুরটি তাঁর হাত ফসকে বেড়িয়ে গেল এবং তাঁর শার্টের হাতার ভেতর ঢুকে গেল। তাঁর শার্টের কলার দিয়ে বের হয়ে একটা অন্ধকার গর্ত খোঁজার চেষ্টা করছিল।
এবং সেই সাহসী পুরুষের হা করে থাকা মুখের ভেতর লাফ দিয়ে ঢুকে দ্রুত গলার ভেতর চলে গেল। ম্যানচেস্টার ইভনিং নিউজের বরাত দিয়ে আমরা জানতে পারি, একটা ইঁদুর নির্দিষ্ট সময় অবধি পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। যাইহোক সেই ইঁদুর তাঁর গলার থেকে বুকের ভেতর অবধি কুট কুট করে কামড়ে সব টুকরা টুকরা করতে লাগল। যার ফলস্বরূপ সেই অভাগার মৃত্যু ঘটেছিল। এর চেয়ে অস্বাভাবিক মরণ আর কি হতে পারে?
০৯. এলার্ম ঘড়ি ও সাড়ে চার কেজি ওজনের পাথর
Internet
স্যাম ওয়ারডেল ১৮৮০ সালের মাঝামাঝি ফ্ল্যাটবুশ (নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের অংশ) এর একজন দীপপ্রজ্বলক হিসেবে কাজ করতেন। দীপপ্রজ্বলকেরা সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে মই নিয়ে গ্যাসচালিত রাস্তার বাতিগুলো জ্বালাতেন এবং খুব ভোরে গিয়ে সেগুলো নিভিয়ে দিতেন। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাঁদের স্থানীয় মানুষদের ঘুম থেকে জাগাতেও হত। তবে স্যাম নিজেই সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারতেন না।
এজন্য তিনি এক অভিনব পদ্ধতির আবিষ্কার করলেন। তিনি যাতে এলার্ম শুনে উঠতে বাধ্য হন সে ব্যবস্থা করলেন। তিনি ঘড়ির সাথে প্রথমে একটা তারের এক মাথা বাঁধলেন এবং অন্য মাথা বাধলেন তার একটি তাকের সাথে। এরপর তিনি একটা সাড়ে ৪ কেজি ওজনের পাথর সেলফের ওপর রাখলেন।
যাইহোক তিনি এমনভাবে সবকিছু সাজিয়েছিলেন যাতে এলার্ম বাজার সাথে সাথে তাকটা মেঝেতে ধপাস করে পরে এবং পাথরটা সজোরে মেঝেতে আঘাত করে যাতে বিকট শব্দ হয়ে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সব ঠিকঠাক চলছিল। তার মেঝে অনেক শক্ত ছিল এবং তার নিচতালায় কোন প্রতিবেশী ও ছিল না।
১৮৮৫ সালের ক্রিসমাসের আগ পর্যন্ত সব সঠিকভাবেই যাচ্ছিল। যাইহোক তার বাসায় সে ক্রিসমাসে পার্টির আয়োজন করে যেখনে বন্ধুদের দাওয়াত করেছিল। সেখানে নাচানাচি করার জন্য তার জিনিসপত্র সরিয়ে দেয়ালের পাশে রেখেছিল এবং কোন কিছু ঠিক না করেই রাতে মাতাল হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এবং যথারীতি ভোরে তার এলার্ম বেজে ওঠে তাকটা মেঝেতে পড়ে ঠিকই তবে পাথরটা তার মাথায় পড়ে। বেচারা এলার্ম বন্ধ করার আগে নিজেই চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল।
০৮. কফিন
Photo credit: The London Dead
আমাদের দেশে যদিও মৃতদেহ আত্নীয় স্বজনরাই বহন করে থাকে, বিদেশে কিন্তু এগুলো বহনের জন্য শুধুমাত্র এই পেশায় ই নিয়োজিত মানুষ রয়েছে। এই কাজটা কিন্তু একদম ই ঝুকিপূর্ণ নয়। কিন্তু লন্ডনের হেনরি টেইলরের জন্য তা সত্যি ঝুঁকিপূর্ন ছিল।
১৮৭২ সালে একটি বর্ষাস্নাত দিনে টেইলর তাঁর নিয়মিত পেশার অংশ হিসেবে গোরস্থানে কাজ করছিলেন। সেখানকার ভূমি প্রচণ্ড পিচ্ছিল ছিল এজন্যই কোন ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে সেখানের উপস্থিত শোকার্তদের শবযান থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গোরস্থানে যেতে অনুরোধ করা হয়েছিল যাতে শবযান অতিরিক্ত ভারের কারণে কাদায় আটকে না যায়।
পরে ৬ জন মানুষ মিলে কফিনটি নিয়ে গোরস্থানের ভেতরে প্রবেশ করছিলেন হঠাৎ অতিরিক্ত ভারে কফিনটি কাট হয়ে গেল এবং সকলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কফিনটি ছেড়ে দিলে সেটার ভারী অংশ সরাসরি টেইলরের ওপর পড়ল এবং তৎক্ষণাৎ ই টেইলরের মৃত্যু ঘটে।
০৫. অতিরিক্ত রঙের কুফল
Internet
১৮৬১ সালে মাটলিডা স্কিউরার নামের একজন নারী কৃত্রিম ফুল তৈরিকারক তাঁর ফুল বানানোর সময় ফুলের পাপড়িতে সবুজ রঙের পাউডার ব্যবহার করেছিলেন যার বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু ঘটেছিল। সে সময় সবুজ রঙের খুব ভালো কদর ছিল নারীদের কাছে। প্রশ্ন হচ্ছে রঙের সাথে মৃত্যুর কি সম্পর্ক? সে সময় সবুজ রঙ বানানো হত বিষাক্ত কপার ও আর্সেনিক ব্যবহারের সাহায্য। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশ্বাস করা যায়, ১৮৮২ সালে আর একজন ১৮ বছরের তরুণী আত্নহত্যার জন্য সবুজ রঙের পাউডার কিনে আনেন এবং সেটা খেয়ে আত্নহত্যা করেন।
০৬. ঘাতক বিলিয়ার্ড বল
Internet
১৮৯৩ সালে লন্ডনের ওয়াল্টার কাউলি নামের এক যুবক তাঁর বন্ধুদের সাথে রাতে কার্লিসেল আর্মস টেভার্ন নামক বিলিয়ার্ড হাউস ও বারে সময় কাটাচ্ছিল। এ সময় সে তাঁর বন্ধুদের বলল যে, সে তাঁর মুখের ভেতর বিলিয়ার্ড বল ঢুকিয়ে রাখতে পারবে এবং ঠোঁট বন্ধ রেখেই। আপনারা বিলিয়ার্ড বল দেখেছেন কিনা জানি না। এই বলগুলোর পরিধি এবং উচ্চতা অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে মানুষের পক্ষে মুখের ভেতর ঢুকিয়ে ঠোঁট বন্ধ রাখা কিন্তু প্রায় অসম্ভব।
যাই হোক কাউলি এ বিষয়ে তাঁর বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে। বাজি অনুযায়ী সে একটা বিলিয়ার্ড বা পুল খেলার বল মুখে ঢুকালো কিন্তু ভাগ্য যে এমন করবে কে জানত? কাউলির হঠাৎ শ্বাস আটকে যায় এবং উপস্থিত বন্ধুরা সবাই তাঁর মুখ থেকে বলটা বের করার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউলির জীবনের আলো নিভেই গিয়েছিল। যেহেতু কাউলি এর আগে ও অনেকবার এই ট্রিক করেছিলেন তাই কারো এ বিষয়ে বাধা ছিল না।
০৫. মৃত-জীবিত-মৃত
Internet
১৮৭৮ সালে ম্যারিয়ন হিলিজ নামে একজন মহিলা দীর্ঘ তবে স্বাভাবিক অসুস্থতার দরুন মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আত্নীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধব উপস্থিত হন। তাঁরা অনেকে নিচু স্বরে কথা বলছিলেন কেউ বা প্রার্থনা করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ মৃতদেহ উঠে বসে পড়ে।
একটু নিজেকে এমন পরিস্থিতিতে ভেবে দেখুন তো? এর চেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা আর কি হতে পারে? যাই হোক ম্যারিয়ন কফিনের উপর উঠে নাচতে থাকে এবং চিল্লিয়ে গাইতে ও থাকেন পাশাপাশি উপস্থিত সবাইকে বলেন,"এখনো মরি নাই তবে শীঘ্রই মরে যাবো।" যাই হোক সেই রাতেই ম্যারিয়ন মারা গিয়েছিলেন।
০৪. অভিনয়ের সময় ছুরিকাঘাত
Internet
১৮৯৬ সালে টেম্পল এজকাম্বে ক্রোজিয়ার নামে একজন অভিনয়কারী লন্ডনে "দ্যা সিনস অফ দ্যা নাইট" নামের একটি মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে এই জগতে পা রাখতে যাচ্ছিলেন। সেই অভিষেক যে তাঁর জীবনের প্রথম ও শেষ অভিষেক হবে সেটা সে কখনো হয়ত ভাবে নি।যাই হোক তাঁর ই এক সহ-অভিনেতার ছুরির আঘাতে হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে মঞ্চেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। সংলাপ টি ছিল "মর,শয়তান তুই মর ।" তবে কোন কারণবশত নকল ছুরির স্থলে আসল ছুরি রেখে দেয়া হয়েছিল। এবং নাটকের ঘটনা অনুযায়ী এই সংলাপ শেষ করতেই বুকে ঠিক হার্ট বরাবর নকল ছুরি দিয়ে আঘাত করা। সব নকল ছিল শুধু আঘাতটা আসল ছিল।
০৩. পিস্তল বাচ্চাদের খেলনা নয়
Internet
১৮৮১ সালের অক্টোবরে একজন ব্যাক্তি কাউকে উপহার দেয়ার জন্য তাঁর চাকরকে একটা পিস্তল আনতে বললেন। সেই চাকর মহাশয় তাঁর মনিবের কথামত একটা পিস্তল আনতে গেলেন এবং সেই পিস্তলটা ভালো করে পরীক্ষা করে কিনবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। হগ, অধমের নাম, একটা বন্দুক হাতে নিয়ে তাঁর মুখমন্ডলের খুব কাছাকাছি দূরত্বে নল তাক করে বন্দুকের ট্রিগার এবং অন্যান্য মেকানিজম দেখছিলেন এবং দেখতে গিয়ে নিজের মুখে নিজেই গুলি করে দিলেন।
সেখানে উপস্থিত আরেকজন চাকর এ পুরো বিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন যে পুলিশে খবর দেন। যাই হোক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে কিভাবে পুরো ঘটনা ঘটলো তাঁর বর্ণনা দিতে গিয়ে সে হুবহু যেভাবে সেই “হগ” গুলি খেয়ে মারা গেছিল সেভাবে ঐ একই পিস্তল দিয়ে নিজের মুখের দিকে তাক করে এবং হঠাৎ বিকট শব্দ হয় আর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সে ও একইভাবে গুলি লেগে মারা যায়। বেশি পান্ডিত্য ভালো না।
০২. ১ম মটরযান দূর্ঘটনা
Photo credit: Illustrated London News
এখন মটরযান দূর্ঘটনা স্বাভাবিক হলেও ১৮৬৯ এ ৩১ শে আগস্টএর আগ পর্যন্ত এসব ভাবনাও মানুষের মনে আসেনি। মেরি ওয়ার্ড যিনি একজন বিজ্ঞানী ছিলেন তাঁর স্বামীর সাথে গাড়িতে চড়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করতেন বলেই হয়ত চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দেন কিছু একটা পরীক্ষা করার জন্য। গাড়ির গতিবেগ ছিল প্রতি ঘন্টায় মাত্র ৪ মাইল। ক্লিন্তু এই গতির কোন বস্তু থেকে পড়ে গেলেও ব্যাথা পর্যন্ত পাওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বিধি বাম হলে যা হয় আর কি। তিনি যে সময় লাফ দিয়েছিলেন সে সময় গাড়িটা মোড় ঘুরছিল অমনি গাড়ীর পেছনের চাকা মেরীর ঘাড়ের ওপর দিয়ে চলে যায় এবং ঘাড় ভেঙ্গে তিনি মারা যান। এটাই পৃথিবীর সর্বপ্রথম সড়ক দূর্ঘটনা।
০১. চিনি খেয়ে মৃত্যু
Internet
চিনি এমনিতেই লোভনীয় পদার্থ যাতে শুধু পিঁপড়া ই নয় বরং অনেক মানুষের ই আসক্তি রয়েছে। এ ধরণের পন্যের ক্ষেত্রে অনেক সময় যোগানের চেয়ে চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। রাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে চিনির দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল আর এই জন্য কম দামে চিনি সরবরাহ করতে সস্তা উপাদান ব্যবহার করছিল সেখানকার ব্যবসায়ীরা। চিনির সাথে অন্য মারাত্নক ক্ষতিকর উপাদান মিশিয়ে বাজারে ছাড়া হত। চুনাপাথর, জিপসাম ও ব্যবহার করা হত। এবং সেইসব চিনি খেয়ে আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় ২১ জন মানুষ মারা গিয়েছিল এবং ২০০ জন কে হাসপাতালে নিয়া হয়েছিল। পরে এই সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছিল।পিঁপড়াদের কথা না হয় নাই বললাম।
আপনাদের আনন্দ দিতেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। যদি আমাদের আয়োজন ভালো লাগে তাহলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।