
এই অসাধারণ মেধাবী নারীরা পৃথিবী পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন
পৃথিবীতে এমন অনেক নারী রয়েছেন যারা তাঁদের অসাধারণ কাজের জন্য স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। এই নারীরা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তাদের প্রথাগত সামাজিক চিন্তা চেতনা এবং গতানুগতিক জীবন ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। উদাহরণস্বরূপ সারা বিশ্বের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ১/৩ ভাগ নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা প্রতিদিনই তাদের কর্মকান্ড কে উন্নত থেকে উন্নততর করছেন। আজ আমরা তেমনি কিছু দীপ্তিমান নারী সম্পর্কে জানব যারা পৃথিবীর পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
১. সাবরিনা পাটার্সকাই- দ্য নিউ আইনস্টাইন
© Sabrina pasterski / facebook © Sabrina pasterski / facebook
মাত্র ২৫ বছর বয়সী সাবরিনা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে বসবাসকারী একজন অসাধারণ তাত্ত্বিক পদার্থবিদ। তিনি তাঁর উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে পৃথিবীকে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছেন । জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ফোর্বস ইতিমধ্যে তাকে নতুন আলবার্ট আইনস্টাইন নামে ঘোষণা করেছে। বিখ্যাত পদার্থবিদ জর্জ টাকেই এই তরুণ পদার্থবিদকে ভূয়শী প্রশংসা করেছেন অন্যদিকে বিখ্যাত রেপার ক্রিস ব্রাউন তাকে প্রমোট করেছেন এমনকি জেফ বেজোস তাকে চাকরি দেয়ার কথা দিয়েছেন।
Moneycontrol
যদি আপনি এই মেয়েটিকে বিবেচনা করেন- আপনি বিশ্বাসই করতে চাইবেন না যে, তার মতো মেধাবী কোন মেয়ে থাকতে পারে? সে শুধুমাত্র সুন্দর ও সুশীল নয় বরং অসাধারণ বুদ্ধিমতী ও। ১২-১৪ বছর বয়সের মধ্যে সে তার নিজস্ব তৈরি ইঞ্জিন চালিত বিমান আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দেন গোটা বিশ্বকে। তার আবিষ্কৃত এই বিমান তৈরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ৩৬০০০ মার্কিন ডলার। এবং সে একজন টেস্ট পাইলট হিসেবে এই বিমানটি সফলভাবে উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছে। টির নাম দিয়েছেন জেনিথ যোডিয়াক।
২. মালালা ইউসুফজাই- নারী এবং শিশু শিক্ষার অগ্রদূত
eNCA
২১ বছর বয়সী পাকিস্তানের কন্যা মালালা ইউসুফজাই যে সুন্দর পৃথিবী নির্মাণের জন্য অসংখ্য গঠনমূলক কাজ করে চলেছে। এই তরুণ বয়সেই পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসী তাকে দেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকের খেতাব দিয়েছেন। এটা কি অসাধারণ নয়? তার তহবিল এর সাহায্যে নারী অধিকার এবং শিক্ষার জন্য সে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছে। তার সকল অর্জন এই ছোট্ট নিবন্ধে বর্ণনা করা সম্ভবই না। সবচেয়ে কনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে সে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। সে দুইটি বই রচনা করেছেন পাশাপাশি তার তহবিলের অর্থ গোটা বিশ্বের ১৩ মিলিয়ন মেয়ের বিদ্যালয় যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর করেছে।
৩. জেনি গুডঅল- যে নারী পুরুষ নামক শব্দটির সাথে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন
threesistersgroup.com.au
যদি আপনি জেনি গুডঅলকে আধুনিক বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের মধ্যে অন্যতম মনে করেন আপনি খুব সম্ভবত ভুল করবেন না। জেনি এই সকল গুটিকয়েক মানুষের মধ্যে একজন যিনি প্রাণীদের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করছেন এবং আমাদের পৃথিবী থেকে আরও উত্তম এবং প্রীতিকর স্থানে উপনীত করছেন। জেনির রচিত "রিডিফাইন্ড ম্যান" নামক বইটি আমাদের শ্রেষ্ঠ বর্গভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী বর্গের গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত করেছে এবং প্রাণীদের আচরণের প্রতি একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
W Magazine
আমরা শুধুমাত্র পৃথিবী নামক গ্রহের একটি মাত্র উপাদান নই। তিনি তার একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, " আমার কাজ হচ্ছে মানুষকে আশা প্রদান করা যাতে মানুষ কাজ করা বন্ধ না করে এবং হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে আরো বেশি কাজ করতে থাকে। এটা আমার কাছে একদমই স্পষ্ট যে আমরা যতদিন না পর্যন্ত আমাদের পৃথিবীকে আগামী প্রজন্মের জন্য আরো উত্তম বসবাস উপযোগী স্থানে রূপান্তর করতে জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারছি, আমাদের উচিত আর কোন বংশ বিস্তার না করা।"
৪. মেলিন্ডা গেটস- যাকে তার প্রতিবাদী কন্ঠ এর জন্য একজন শক্তিশালী নারী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়।
CNBC.com
ফোর্বস মেলিন্ডা গেটস পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মানব প্রেমী নারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। দয়ালু, মহানুভব, সৌন্দর্য এই গুনগুলোই মেলিন্ডা কে সংজ্ঞায়িত করে। আপনি কল্পনা করতে পারন মেলিন্ডার একটি কত দাতব্য সংস্থার তহবিলে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৪০০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই নারী শুধুমাত্র একজন মানবপ্রেমী নয় বরং একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী, কিন্তু নারী এবং মেয়েদের জন্য উৎসাহী প্রবক্তা। ২০১৬ সালে তিনি একটি নতুন মিশন ঘোষণা করেন যেখানে তিনি নারীদের প্রযুক্তি খাতে দীক্ষিত করার কাজ হাতে নেন।
www.gatesfoundation.org
এ বিষয়ে তিনি বলেন, " আমার কাছে কাজ করার সর্বোত্তম ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিশিল্প বর্তমানে একটি অন্যতম ক্ষেত্র। যদি আমি আবার কাজ করতে পারতাম তাহলে আমি প্রযুক্তি অথবা জীববিদ্যা কিংবা প্রযুক্তি ও জীববিদ্যা দু'টোকেই কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিতাম। প্রত্যেকটা কোম্পানিরই প্রযুক্তির প্রয়োজন পড়ে এবং এখনো আমাদের খুব কম সংখ্যক নারীরাই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাদের উচ্চতর পড়াশোনা সম্পন্ন করছেন যেটা সমাজের জন্য মোটেও সুখকর নয় আমাদের এই চিন্তা চেতনাকে পরিবর্তন করতে হবে। "
৫. অ্যালেন ওচোয়া- নভোচারী এবং একজন বীর
© NASA / wikipedia
অ্যালেন ওচোয়া একজন আমেরিকান প্রকৌশলী এবং সাবেক নভোচারী এবং অবশ্যই অনেক মানুষের কাছে একজন বীর। তিনি মহাকাশযানে চারটি অভিযান সম্পন্ন করেছেন এবং প্রথম কোন নারী হিসেবে মহাকাশে উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছেন। বাহ! সন্তানদের জন্য তিনি কতই না গর্বের বিষয়! ওচোয়া তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এর জন্য এক ধরনের অপটিক্যাল সিস্টেম আবিষ্কার করেছেন যা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সমাজের প্রতি তার বিশাল অবদান। এর সাথে সাথে উৎপাদন খাতে রোবটের ব্যবহার এর এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। তার অসম্ভব মেধাবী ভাবনাচিন্তা তাকে অসংখ্য পুরস্কার এনে দিয়েছে। যে সকল পুরস্কারের মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯৯৭ সালে মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার ব্যতিক্রমধর্মী সেবা প্রদানের জন্য প্রাপ্ত মেডেলটি।
৬. লিন্ডা যে ওয়াচনার- ব্যবসায় জগতে এক অসাধারণ উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিভা
Getty Images
লিন্ডা শুধুমাত্র একজন বিখ্যাত নারী নন বরং একজন চিত্ত পরিবর্তনকারী। তিনি নারীদের ব্যবসায় অংশগ্রহণ সংক্রান্ত সামাজিক মতামতকে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। সে সকল তরুণ মেয়েদের কাছে লিন্ডা একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব যারা সফল ব্যবসা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চান। ছোটবেলায় যখন তার বয়স ১১ তখন তার মেরুদন্ডে বক্রতা ধরা পড়ে এবং এজন্য গোটা এক বছরেরও বেশি সময় তাকে অস্ত্রোপচারের পরে ব্যান্ডেজ এর মধ্যে থাকতে হয়েছিল।
zimbio.com
সময় সে তার শরীরের বিন্দু পরিমানও নাড়াচাড়া করতে পারত না। ধুম তখনই সে তাঁর ভবিষ্যতে সফল মানুষ হওয়ার ফোন করেন এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে তিনি আবার হাঁটবেন এবং কোন কিছুই তাঁকে আটকাতে পারবেনা। ১৯৯২ সালে লিন্ডাকে আমেরিকার সবচেয়ে সফল নারী হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৯৩ সালে একজন শক্তিশালী বস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। অন্য সকল আলোচনার বাহিরে আমরা এই কথাটা বলতে পারেন ইন দা একজন সফল নারী ব্যবসায়ী এবং নেতা।
৭. স্টেফ জেব্রেইল- "প্লাস্টিক চমৎকার নয়।"
Sunshine Coast Daily
এই মেয়েটি একজন চমৎকার সক্রিয় কর্মী, একজন উদ্যোক্তা এবং একজন সামুদ্রিক বিজ্ঞানী। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে পরিবেশকেই বেশি গুরুত্ব দেন। ২০১৪ সালে স্টেফ একটা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করান যা মূলত পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল থেকে সাঁতারের পোশাক তৈরি করে তা বিক্রি করে পাশাপাশি সমুদ্র থেকে সকল মাছ ধরার ক্ষতিকারক জাল গুলোকে অপসারণ করে। তার স্লোগান হচ্ছে- " সাগরকে রক্ষা করি, বিকিনি একটাই পরি।"
৮. ড্যানিয়েলী ফং- শক্তিকে সহজলভ্য এবং পরিবেশবান্ধব করা
YouTube
ড্যানিয়েলী বিদ্যালয় এর পাট চুকিয়ে মাত্র ১২ বছর বয়সে কলেজে ভর্তি হন। তার সম্পর্কে এটা বলা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট যে সে অসাধারণ। ২২ বছর বয়সে সে তার কিছু বন্ধুর সাথে মিলে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করে যার নাম লাইটসেইল এনার্জি। কম্প্রেসড এয়ার এনার্জি সংরক্ষনের একটি পদ্ধতি বিকশিত করছে। আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীর বিনির্মাণ কারীদের মধ্যে তিনি একজন। ২০১১ সালে বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস তাকে " থার্টি আন্ডার থার্টি" নামক তালিকায় একজন উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাকে এই খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে যে " পৃথিবীকে সে সুরক্ষিত করতে পারে।"
আমাদের এখানে আলোচিত কোন নারীর অবদান আপনার ভালো লেগেছে? এবং আপনি আর কাকে যুক্ত করতে চান? আপনাদের মূল্যবান মতামত জানানোর অনুরোধ রইলো। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।